অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দেশ যখন উন্নয়নের ধারায় ঠিক তখনই বিএনপি-জামায়াত আবার নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ স্থিতিশীল রাষ্ট্র এবং উন্নয়নের রোল মডেল। দেশে যখন সহিংসতা নেই, মানুষ নিরাপদে কর্মস্থলে যেতে পারছে, নিশ্চিন্তে ঘরে বাস করছে। ঠিক সেসময় আজকে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে চক্রান্ত করছে। তাদের লক্ষ্য নির্বাচন বানচাল করা। কারণ তারা নির্বাচন চায় না।
শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মাদারটেক আব্দুল আজিজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে সবুজবাগ থানা ও ৪, ৫, ৭৩, ৭৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
হানিফ বলেন, বিএনপির লক্ষ্য হলো সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আমরা বলেছি, এসব দিবাস্বপ্ন বাদ দিয়ে নির্বাচনে আসুন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। জনগণ ভোট দিলে আপনারাই ক্ষমতায় আসবেন। আর জনগণ ভোট না দিলে ক্ষমতায় আসার কোনো সুযোগ নেই।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী জড়িতে ছিল- এমন অভিযোগ করে হানিফ বলেন, ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার করার পরও তাদের মধ্যে অনুশোচনা কাজ করেনি। বঙ্গবন্ধুকন্যার ওপর পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম গ্রেনেড হামলার জন্য ক্ষমাও চায়নি। কয়েকদিন আগে জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় অভিযুক্ত এবং দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফর জামান বাবর এবং সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর মুক্তি দাবি প্রমাণ করেছে এ ঘটনায় বিএনপির সবস্তরের নেতাকর্মী জড়িত। বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে এর পরিকল্পনা হয়েছিলো।
অন্যের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা কথায় কথায় বলেন আওয়ামী লীগ তাদের সমাবেশে বাধা দেয়। আওয়ামী লীগ অন্যের কর্মসূচিতে বাধা দেয় না। আর আওয়ামী লীগ বাধা দিলে কারও সমাবেশ করার সুযোগ থাকে না।
বিএনপি শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হানিফ বলেন, বিএনপির শাসনামলে আমরা রাস্তায় দাঁড়াতে পারিনি। বিএনপির সন্ত্রাসী হামলা, পুলিশের লাঠিপেটায় আমাদের সিনিয়র নেতারা আহত হয়েছেন, রক্তাক্ত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। সমাবেশে বাধা দেওয়ার রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না।
বিএনপির সামবেশ দেখে আওয়ামী লীগ ভয় পায়- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ভয় পাওয়ার দল নয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ২৩ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আওয়ামী লীগ নয় বরং দেশের জনগণ বিএনিপির সমাবেশকে ভয় পায়। কারণ জনগণ সমাবেশের নাম করে বিএনপির কর্মকাণ্ড দেখেছে। বিএনপি সমাবেশের নাম করে সাড়ে ৩০০ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হওয়া ২৫০০ মানুষ এখনো অমানবিক জীবনযাপন করছেন।
বিএনপি সন্ত্রাসী, খুনির দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কর্মসৃচির নামে বিএনপি যদি কখনো দেশকে অশান্ত করতে চায়, জ্বালাও-পোড়াও করে তাহলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজন হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আগুন সন্ত্রাস প্রতিহতে এগিয়ে যাবে।
হানিফ বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র ছিল। বিদেশিরা বলেছিল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই ঘুরে দাঁড়িয়ে আজ বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন সঠিক নেতৃত্ব ও দেশপ্রেম থাকলে দেশ ঘুরে দাঁড়ায়।
শেখ হাসিনা দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় পরিণত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়েছে। বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম-আয়ের দেশে পরিণত হবে। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ হবে এবং এটাই আমাদের লক্ষ্য। শেখ হাসিনা কথা দিয়েছিলেন এবং তা পূরণও করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে উন্নয়নের যাত্রায় নিয়ে আসার পথ মসৃণ ছিল না। উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে বারবার আঘাত এসেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর আঘাত হানা হয়েছে। ২০০১-১০০৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ এবং ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বয়কটের নামে সহিংসতা হয়েছে। পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। দেশের মানুষের আস্থা থাকায় শেখ হাসিনার কঠোর নেতৃত্বে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আজ সেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
হানিফ বলেন, বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, কিন্তু তারা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে একটি কাজও করতে পারেনি। বিএনপি নেতাদের বলেছি, আপনারা ক্ষমতায় থাকতে এমন একটি উন্নয়ন কাজ করেছেন আমাদের বলুন, তারা বলতে পারলেন না। তাদের নেতা তারেক রহমান হাওয়া ভবন বানিয়ে সরকারের মধ্যে সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশকে বিশ্বে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন করেছিল, এটাই ছিল তাদের অর্জন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের শেখ হাসিনা ওয়াদা করেছিলেন ২০২১ সালের আগে বাংলাদেশকে মধ্যম-আয়ের দেশে পরিণত করবেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করবেন। আজকে বাংলাদেশে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা যা বলেছেন তাই বাস্তবায়ন করেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চান। আর এজন্য আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
দলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবুজবাগ এলাকায় ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ চক্রের গ্রুপ আছে। যাদের বিরুদ্ধে মাদককারবার, ভূমি দস্যুতা, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে, তাদের কমিটিতে পদ দেওয়া যাবে না।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। এছাড়া সম্মেলন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।
সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আশ্রাফুজ্জামান ফরিদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাসের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মুহম্মদ আনিসুর রহমান।
Leave a Reply